নার্সারীতে সফল বৃক্ষপ্রেমী সাইদুর

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬ সময়ঃ ২:১২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩২ অপরাহ্ণ

তোফায়েল হোসেন জাকির (গাইবান্ধা প্রতিনিধি)

indexনার্সারী করে আর্থিকভাবে সফল হয়েছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান। তার নার্সারিতে রয়েছে প্রায় ২৫ প্রজাতির ফলের গাছ। বর্তমানে নার্সারী থেকে তার বার্ষিক আয় হচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মতো। সাইদুরের এই নার্সারি দেখে মদনেরপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে।

ফুলছড়ি উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের পাশে মদনেরপাড়া গ্রামটি ব্র‏হ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। নদীভাঙ্গনের কারণে এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। এই বাস্তবতায় সাইদুর রহমান কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চাকরির বয়সও অনেকদিন আগে শেষ হয়েছে। বিয়ে করার পর তিনি আরও কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন। তার কোনো পৈতৃক সম্পত্তি ছিল না বললেই চলে।

তিনি ১৯৯৮ সালে চাকরির খোঁজে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে যান। চাকরি নামের সোনার হরিণের সন্ধান না হওয়ায় তিনি হতাশার মধ্যে পড়েন। সেখানে বিএডিসির একটি নার্সারি দেখে তার নার্সারি করার শখ জাগে। নিজ গ্রামে এসে বসতবাড়ির পাশে ১০ শতক জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাতে শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন নার্সারী। নাম দিয়েছেন ‘সুরভী নার্সারী’।

এ নার্সারীতে জলপাই, লিচু, বরই, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, লেবু, জাম, আখ, মরিচ, বিভিন্ন জাতের ফুল ও ওষধি গাছ পাথরকুচি, তুলসি চারা উৎপাদন শুরু করেন। এসব চারা বিক্রি করে তার মাসিক আয় হচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তাকে এখন নার্সারী সাইদুর নামেই সবাই চেনেন।

গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া ও জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে তার নার্সারী থেকে কলম জাতের গাছের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন তার বার্ষিক আয় ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা। তিনি জানান, তার এই দুই বিঘা জমির নার্সারীতে বার্ষিক ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ব্যয় বাদে তার আয় থাকছে ৮০ হাজার টাকা।

নার্সারীর আয় দিয়ে তিনি তার তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। বড় ছেলে আলিফ সেনাবাহিনীতে চাকরি করছেন। মেজ ছেলে আতিকুর রহমান দশম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।  

সাইদুর রহমান জানান, নার্সারী ব্যবসা করে লাভবান হওয়াই বড় কথা নয়। তিনি নার্সারী ব্যবসায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই এটা শুরু করেছেন। তিনি তার নার্সারীকে দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। পাশাপাশি এ উপজেলায় কমপক্ষে শতাধিক নার্সারী তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এজন্য দিন-রাত খেটে যাচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহাজুল ইসলাম বলেন, সাইদুরের নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের হাজার দশেক গাছ রয়েছে। তার দেখাদেখি উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক নার্সারী বাগান গড়ে উঠেছে।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G